নিজস্ব সংবাদদাতা : ২২ জুলাই সোমবার, শ্রাবণ মাসের প্রথম । এ দিন উপবাস ও শিবপুজোর বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। ধর্মীয় ধারণা অনুযায়ী সারা বছর শিব পুজো করে যে পুণ্য ফল অর্জন করা যায়, তা শ্রাবণের সোমবারে শিবের জলাভিষেক ও বেলপাতা নিবেদনের মাধ্যমেই লাভ করা সম্ভব হয়। শ্রাবণ সোমবারের উপবাস ও নিয়ম মেনে শিবের পূজার্চনা করলে জীবনের সমস্ত দুঃখ-কষ্ট দূর হয়, পাশাপাশি কাঙ্খিত ফল লাভ করা যায়। এ বারের শ্রাবণ মাসের সোমবারে পাঁচটি শুভ যোগ তৈরি হচ্ছে। এই শুভ যোগে শিবের আরাধনা করলে বহুগুণ অধিক ফল পাওয়া যায়।শ্রাবণের সোমবারে এ বার ৫টি অদ্ভূত যোগ তৈরি হচ্ছে। এ দিন প্রীতি যোগের পাশাপাশি আয়ুষ্মান যোগ থাকছে। পাশাপাশি চাঁদ ও মঙ্গল একে অপরের থেকে নবম এবং পঞ্চম স্থানে অবস্থান করবে, যার ফলে তৈরি হবে নবপঞ্চম যোগ। আবার স্বরাশি কুম্ভে বিরাজ করে শনি শশ মহাপুরুষ রাজযোগ তৈরি করছে। শশ রাজযোগের সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত কার্যসিদ্ধি করতে পারে এমন সর্বার্থসিদ্ধি যোগও থাকবে। এই পাঁচ শুভ যোগে মহাদেবের পূজার্চনা করলে শুভ পরিণাম পাওয়া যায়।
প্রথমটি পুরাণ মত। লিখিত আছে, এই শ্রাবণমাসে সমুদ্রমন্থন হয়েছিল, উঠে এসেছিল গরল। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে রক্ষা করতে দেবাদিদেব পান করেছিলেন সেই গরল। বিষ পান করে মহাদেবের গায়ের রঙ হয়ে গেছিল নীল। তাই শিবের আর এক নাম নীলকণ্ঠ। দ্বিতীয় মতে, শিব তাঁর শ্বশুরমশাই দক্ষরাজাকে কথা দিয়েছিলেন একমাস তাঁর বাড়িতে থাকবেন এবং দক্ষরাজের নামে বিশেষ শিবপুজোর প্রচলন হবে। কোনও এক শ্রাবণমাসে তিনি পার্বতীকে সঙ্গে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি গেছিলেন এবং একমাস ছিলেন। এর পরেই দক্ষশিবের পুজো চালু হয়েছিল। হরিদ্বারের কাছে কনখলে দক্ষদেবের মন্দির এখনও আছে। এই কারণেই শ্রাবণমাসকে শিবের আরাধনার মাস। তৃতীয় মতটা অনেকটাই সমাজ ও পরিবেশের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। শিব সৃষ্টির দেবতা। শ্রাবণ মাস সৃষ্টির মাস। বর্ষাকালে এই সময়ে জমিতে ধান ও অন্যান্য শস্য বপন করা হয়, জমি কর্ষণ করে বীজধান রোপণ করেন কৃষিজীবীরা। শিবপুরাণের রুদ্রসংহিতায় মহাদেবকে এই সময়ে ধান্যশস্য দিয়ে পুজো করার কথা লেখা রয়েছে।
শিবঠাকুর কীসে তুষ্ট হন?
মহাদেব খুব অল্পে তুষ্ট হন। তাই অতিরিক্ত আয়োজনের দরকার নেই। টাটকা বেলপাতা, আকন্দফুলের মালা, ধুতরো ফুল, কলকে ফুল আর শ্বেতচন্দন দিয়ে শিবলিঙ্গকে সাজালে খুব খুশি হন দেবতা। এছাড়া গাঁদাফুল ও যে কোনও সাদা সুগন্ধী ফুল মহাদেব পছন্দ করেন। নৈবেদ্যে ফলমূল ও মিষ্টান্ন নিবেদন করলেই শিবঠাকুর খুশি। মন্দিরে মন্দিরে শিবের প্রিয় পরমান্ন ভোগ দেওয়া হয়। তবে মহাদেব সন্তুষ্ট হন ভক্তের আন্তরিক নিবেদনে, ভক্তিতে।
শ্রাবণে শিবের ব্রতপালনের নিয়ম কী কী?
- শ্রাবণের প্রতি সোমবার সকালে স্নান সেরে শুদ্ধ বস্ত্র পরে শিবের আরাধনায় বসতে হবে।
- যাঁরা উপবাস করতে পারেন না তাঁরা সোমবার নিরমিষ খাবেন। অনেকে পুরো শ্রাবণমাস নিরমিষ খেয়ে ব্রত পালন করেন।
- বেলপাতা শিবের অতি প্রিয়। ২১টি বেলপাতায় শ্বেতচন্দন দিয়ে 'ওঁ নমঃ শিবায়' লিখে অর্পণ করতে হবে।
- দুধ, গঙ্গাজল ও কালো তিল দিয়ে শিবলিঙ্গকে স্নান করাতে হবে। যে পাত্রে দুধ-গঙ্গাজল নেবেন সেটি তামার না হলেই ভাল। অন্য যে কোনও ধাতুর বা পাথরের পাত্র ব্যবহার করতে পারেন।
- ভক্তি ভরে শিবের স্তোত্র পাঠ করুন।
- 'ওঁ নমঃ শিবায়' মন্ত্র যতবার পারবেন জপ করবেন।
- স্বামী বা প্রিয়জনের রোগ আরোগ্য ও সুস্থতার কামনায় মহাদেবের সামনে বসে মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র পাঠ করুন।
- কোনও কাজ আটকে আছে, কিছুতেই ফললাভ হচ্ছে না– এমন সমস্যায় পড়লে শ্রাবণ মাসে প্রতিদিন শিবের কাছে একটি করে আস্ত ফল নিবেদন করুন। ভোলেবাবার কাছে সমস্যার কথা জানান। সমাধান হবেই, এমনই বিশ্বাস ভক্তদের।