নিজস্ব সংবাদদাতা : ২০২২ সালের ২ মে মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের গোরাবাজার এলাকায় খুন হন কলেজ ছাত্রী সুতপা চৌধুরী। খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হন ‘প্রেমিক’ সুশান্ত চৌধুরী। গত বছরই আদালত তাঁকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছে। এবার সেই মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদে প্রেমিকের সঙ্গে একা একা দেখা করতে যেতে রাজি ছিলেন না সাবিনা খাতুন। প্রিয় বান্ধবীকে সঙ্গে যেতে বলেছিলেন। যাওয়ার ইচ্ছে না থাকলেও । সাবিনাকে সঙ্গ দিয়ে ছিলেন প্রিয় বান্ধবী। কিন্তু চোখের সামনে বান্ধবীকে তাঁর প্রেমিকের হাতে খুন হতে দেখে। মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদে ছাত্রী খুনের ঘটনায় একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী তিনিই। বান্ধবীর মুখে পুলিশ শুনল, কী ভাবে ১৮ বছরের মিঠু শেখের ছুরির আঘাতে খুন হন তাঁরই সহপাঠিনী ১৭ বছরের সাবিনা খাতুন বলতে গিয়ে বার বার কেঁদে ফেলছেন। আঁতকে উঠছেন। বান্ধবী যে আর নেই, সেটা কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না তাঁর। তাঁর দাবি, মিঠু যে তাঁকে ডেকে আবার অশান্তি করবেন, সাবিনা সেটা জানতেন। তাই তাঁকে সঙ্গে যেতে বলেছিলেন। বান্ধবীর কথায়, ‘‘সাবিনা বলেছিল, ‘ছেলেটা বার বার জ্বালাতন করছে। দেখা করার জন্য চাপ দিচ্ছে। ভয় দেখাচ্ছে।’ তার পর বলেছিল, ‘তুই যাবি আমার সঙ্গে?’’’ ছোটবেলার বান্ধবী। অসুবিধায় পড়ে ফোন করছে। তাই তাঁর সঙ্গে যেতে রাজি হয়ে যায়।
পুলিশ সূত্রে খবর, সাবিনাকে ফোন করে স্কুলের সামনে ডেকেছিলেন মিঠু। অল্প কিছু ক্ষণের কথাবার্তা, তার পরেই কথা কাটাকাটি এবং খুন। প্রত্যক্ষদর্শী,পুলিশকে জানিয়েছেন শনিবার দুপুরে প্রাইমারি স্কুলের সামনে সাবিনাকে দেখার পরে প্রথমে কান্নাকাটি শুরু করেন মিঠু। তার পর তর্কাতর্কি শুরু হয়। এরপর, দু’জনে একে অপরকে গালাগালি পর্যন্ত করেন। তিনি বান্ধবীকে কোনও ভাবে সরিয়ে আনতে পারেননি। কিন্তু দু’জনে যে ভাবে ঝগড়া করছিলেন, তাতে ভয় পেয়ে যান তিনি। খারাপ কিছুর আঁচ করে আশপাশের পরিচিত কাউকে ডাকতে গিয়েছিলেন। তার পর যখন ওই স্কুলের সামনে এলেন, তত ক্ষণে দেখেন সাবিনার নিথর এবং রক্তাক্ত দেহ পড়ে রয়েছে মাটিতে। আর উল্টো দিকে জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটে পালাচ্ছেন মিঠু। সাবিনার গলায় কাটা দাগ। ওই দৃশ্য দেখেই জ্ঞান হারান বান্ধবী। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে যেটুকু তিনি বর্ণনা দিতে পেরেছেন, সেটা হল, সাবিনার সঙ্গে নতুন এক জনের বন্ধুত্ব হয়েছিল। তাতে জোর আপত্তি ছিল মিঠুর। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে গন্ডগোল শুরু হয়। একটা সময়ে মিঠুর সঙ্গে আর সম্পর্ক রাখতে চাননি সাবিনা। কিন্তু ফোনে কথাবার্তা হলেই শুরু হয় ঝগড়া ও কথা কাটাকাটি। বৃহস্পতিবার ফেসবুক-সহ যে সব সমাজমাধ্যমে সাবিনার প্রোফাইল ছিল, তার সব ক’টি থেকে ব্লক করে দেন মিঠুকে। তার পর অন্য একটি নম্বর থেকে সাবিনার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেন মিঠু। এ বার আসে হুমকি। মিঠু তাঁর বান্ধবীকে শাসান, দেখা না করলে তাঁদের ব্যক্তিগত মুহূর্তের সমস্ত ছবি ফাঁস করে দেবেন। তাই বাধ্য হয়ে মিঠুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন সাবিনা। প্রত্যক্ষদর্শী বান্ধবীর দাবি , সাবিনাকে ছুরি দিয়ে মারার পর সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করছিলেন মিঠু। পুলিশের কাছে দাবি করেছেন তার পর আর কিছু তাঁর মনে নেই। ইতিমধ্যে মিঠুকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ।
অন্যদিকে মিঠু শেখের মায়ের দাবি, ছেলের আচরণে কোনও অস্বাভাবিকত্ব ছিল না। এমনকি,মোটরবাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান দুপুরে খাবার খেয়ে। কিন্তু হন্তদন্ত হয়ে ঘণ্টাখানেক বাদে মিঠু যে ভাবে ছুটে এসে তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন, তিনি বলেন, ‘‘রক্তমাখা ছিল ওর হাত। আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘আমি ওকে শেষ করেছি।’’’ তবে ছেলের কান্না দেখে তিনিও কাঁদতে থাকেন। পরিবারের দাবি, খুনের পর বাড়ি থেকে নিজেই পুলিশকে ফোন করেছিলেন মিঠু। বাড়ি থেকেই তাঁকে নিয়ে যায় পুলিশ। কিছু ক্ষণের মধ্যেই মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদের হাজারিপাড়ায় মিঠুর বাড়িতে আসে পুলিশ। এক সহপাঠিনীকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় বছর ১৮ ওই তরুণকে।