নিজস্ব সংবাদাতা: অরিষ্টাসুরকে বধ করার পর রাসনৃত্যের জন্য কৃষ্ণ গোপীদের কাছে এলেন। কিন্তু কৃষ্ণের সাথে মজা করার জন্য গোপীরা তখন পিছিয়ে যেতে লাগলেন, আর বলতে লাগলেন, "তোমার পক্ষে আমাদের কাউকে স্পর্শ করা ঠিক নয়। কিছুক্ষণ আগেই তুমি একটি ষাঁড়কে হত্যা করেছ। " কৃষ্ণ বললেন, "সে তো একটি অসুর ছিল, যে কিনা ষাঁড় দেহকে আশ্রয় করছিল।" গোপীরা বললেন, "সে যাই হোক না কেন, তাকে হত্যা করে তোমার পাপ হয়েছে।" কৃষ্ণ তখন গোপীদের নিকট অনুনয়-বিনয় প্রদর্শন করে প্রায়শ্চিত্ত বিধান শ্রবণ করতে চাইলেন। গোপীরা বললেন, "ঠিক আছে এজন্য তোমাকে একরাত্রের মধ্যে সমস্ত পবিত্র নদ-নদীতে স্নান করতে হবে।" কৃষ্ণ তখন পায়ের গোড়ালি দিয়ে মাটিতে আঘাত করে একটি গর্ত সৃষ্টি করলেন এবং সমস্ত তীর্থকে আহ্বান করলেন। মূহুর্তের মধ্যেই সকল তীর্থ দিব্যদেহ ধারণ করে সেই স্থানে উপস্থিত হলেন এবং শ্রীকৃষ্ণের স্তব করতে করতে জলব্রহ্মরূপে কুণ্ডে প্রবেশ করলেন। কৃষ্ণ তখন সেই কুণ্ডে অবতরণ করে তাঁর গলা পর্যন্ত জলে নামিয়ে বেশ কয়েকবার মাথা ডোবালেন এবং উঠে এসে গোপীদের বললেন, "হ্যাঁ; এখন আমি সম্পূর্ণভাবে শুদ্ধ। কিন্তু তোমারাও তো অপবিত্র, কেননা তোমরা কখনও ব্রহ্মাকে সন্তষ্ট করার জন্য কোন রকম স্নান, দান, ব্রত, তপস্যা করনি।" রাধারাণী বললেন, "তবে আমরাও পবিত্র হব। তোমার এই কুণ্ডের চেয়ে আরো ভাল কুণ্ড তৈরি করে, তাতে স্নান করব।" শ্যামকুণ্ডের অনতিদুরে পশ্চিমে অরিষ্টাসুরের খুড়ের আঘাতে সৃষ্ট একটি অগভীর খাঁদ ছিল। তখন রাধারাণী অন্যান্য গোপীদের সহায়তায় হাতের কঙ্কন ও বালা দিয়ে একটি বিরাট গর্ত করলেন। কিন্তু জল তো আসছে না। কৃষ্ণ তখন বললেন, "তোমার আমার কুণ্ডের জল দিয়ে সেটিকে পূর্ণ করতে পার।" রাধারাণী জবাব দিলেন, "তুমি এই জলে স্নান করে জলকে কলুষিত করেছ। আমাদের এমন জল দরকার নেই।" তখন গোপীরা মিলে মানসী গঙ্গা (কৃষ্ণের মন থেকে সৃষ্ট) থেকে কলস ভর্তি করে জল আনতে থাকলেন। তখন শ্যামকুণ্ডের তীর্থগণ রাধারাণীর চরণে প্রার্থনা করতে লাগলেন, "হে দেবী! আপনাকে ব্রহ্মা-শিবের মতো মহান দেবতারাও জানতে পারেন না। একমাত্র কৃষ্ণই আপনাকে জানেন। তাই তিনি চান যে, আপনারা ক্লান্ত হয়েছেন, আপনারা আপনাদের ঘাম ধৌত করুন। বস্তুত আমরা কৃষ্ণের আজ্ঞাতেই এই কুণ্ডে এসেছি। কিন্তু আকাঙ্ক্ষা করছি যেন, আপনার কুণ্ডে আশ্রয় পেতে পারি। তবেই তো জীবন সফল হবে।" সরল হৃদয়া রাধারাণী তখন সস্মত হলেন। তক্ষুণি শ্যামকুণ্ডের পাড় ভেঙ্গে তীর্থগণ রাধাকুণ্ডকে প্লাবিত করলেন। কৃষ্ণ তখন বললেন, "হে মানিনি রাধা, তোমার কুণ্ড আমার কুণ্ড থেকেও বিখ্যাত হোক। আমি সর্বদা এখানে স্নান ও জলক্রীড়া করতে আসব। নিঃসন্দেহে এই কুণ্ড আমার কাছে তোমার মতোই প্রিয়।" রাধারাণীও বললেন, "আর আমি ও আমার সখীরাও তোমার কুণ্ডে স্নান করব এবং যদি কেউ পরম ভক্তি সহকারে তোমার কুণ্ডে স্নান করে বা তোমার কুণ্ডের তীরে বাস করে সে নিশ্চিতরূপে আমার অত্যন্ত প্রিয় হবে।" সেই রাত্রি থেকেই 'রাধাকুণ্ড' ও 'শ্যামকুণ্ড' আবির্ভূত হলেন। যিনি জীবনে একবারের জন্যও রাধাকুণ্ডে স্নান করবেন বা এর তীরে বসে ভজন করবেন, তিনি শ্রীমতি রাধারাণীর কৃপায় কৃষ্ণপ্রেম লাভ করবেন।
বহুলাষ্টমী কি?
কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথি 'বহুলাষ্টমী' নামে পরিচিত। এই তিথিতে ব্রজে উৎপাত-সৃষ্টিকারী বৃষরূপী অরিষ্টাসুরকে শ্রীকৃষ্ণ বধ করেন। শ্রীমতী রাধারাণী বৃষবধের প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ সর্বতীর্থে স্নান করা উচিৎ বলে জ্ঞাপন করে শ্রীকৃষ্ণ বামচরণের গোড়ালীর আঘাতে এক কুণ্ড প্রকাশ করেন। তা শ্যামকুণ্ড নামে বিদিত। মধ্যরাত্রে শ্রীকৃষ্ণের আাহ্বানে পৃথিবীর সমস্ত তীর্থ নিজ নিজ রূপ ধারন করে এই স্থানে আগমন করেন। ক্ষীরসমুদ্র, লবণ সমুদ্র, পুষ্কর, প্রয়াগ ইত্যাদি বহু তীর্থ এসে শ্রীকৃষ্ণ পাদপদ্মে প্রণতি নিবেদন করেছিলেন। তাই এই তিথিকে বহুলাষ্টমী বলা হয়। আজকের দিনে শ্রীকৃষ্ণ নিজের পায়ের গোড়ালির আঘাতে একটি কুন্ড তৈরি করেন, এরপর ভগবানের আহ্বানে এই কুন্ডে ত্রিভুবনের সমস্ত পবিত্র নদী অবস্থান করেন। এরপর রাধারানী ও তার সখীগণ ঠিক করেন তারাও এইকুণ্ডের পাশে আর একটি কুণ্ড নির্মাণ করবেন, তখন তারা সকলে মিলে হাতের বালা দিয়ে খুঁড়ে তৈরি করেন আরেকটি কুণ্ড। এরপর সেই কুণ্ড জল ভর্তি করবার জন্য রাধারাণী তার সখীদের নিয়ে ভগবতী গঙ্গা থেকে কলসী করে জল আনছিলেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই বহুলা বা গাভীর সততা দেখে ভগবান এত সন্তুষ্ট হয়েছে বৃন্দাবনে যে স্থানে যে বনের এই লীলাটা হয়েছিল। ভগবান বললেন তোমার সততাতে সন্তুষ্ট হয়ে এই বনের নাম রাখলাম ‘বহুলা বন’। আরো বললেন তুমি পরের জন্মে আমার প্রিয়শ্রী ও সখী হয়ে জন্মাবে।