বাঁকুড়া নিজস্ব সংবাদদাতা : এই কাহিনিকে স্মরণ করেই উৎসবে মাতলেন বাঁকুড়ার তালডাংরা ব্লকের পাকুড়ডিহার বাসিন্দারা। যার পোশাকি নাম ‘সাত ভায়া মিট্টাং মেশ্রা’। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে পুরুষদের এমন কৃচ্ছসাধনের ইতিহাস শুধু এ দেশে নয়, সারা বিশ্বেই বিরল।বছরের একটি নির্দিষ্ট দিনে গ্রামের অদূরে হয় বিশেষ পুজো। সেখানেই ফুটন্ত ঘিয়ে হাত ডুবিয়ে গুড় পিঠে তৈরি করেন পুরুষরা। কিন্তু কেন? ‘সাত ভাই চম্পা’র গল্প সকলেরই জানা। দেশে দেশে বিভিন্ন ভাষায় ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে রূপকথায় বর্ণিত হয়েছে সেই গল্প। সাত ভাই-এর জীবন বাঁচাতে প্রাণ বাজি রেখেছিলেন একমাত্র বোন। সেই বোনের স্মৃতিতেই দাদা’রা যোগদান করেন এই পার্বণে। কথিত আছে, প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে বাঁকুড়ার জঙ্গলঘেরা পাকুড়ডিহা গ্রামে বসবাস করত সাত ভাই এবং তাঁদের এক বোন। তাঁদের পেশা ছিল জঙ্গলের পশু শিকার। এক দিন পশু শিকারে গিয়ে আর ফিরে আসেননি সাত ভাই। গ্রামের অন্যান্যদের মুখে এক মাত্র বোন সেই খবর পান। এর পর ভাইদের মঙ্গলকামনায় সাধনা শুরু করেন বোন। কথিত আছে, বহু দিন পর সাত ভাই অক্ষত অবস্থায় বাড়িতে ফেরেন। সেই ঘটনাকে স্মরণ করেই প্রতি বছর উৎসবে মাতেন পাকুড়ডিহার বাসিন্দারা। পাকুড়ডিহা গ্রামে সেই বোনের স্মৃতিতেই শুরু হয় ‘সাত ভায়া মিট্টাং মেশ্রা’ মতান্তরে ‘সাত ভাইয়া মিট্টাং বেহানা’ উৎসবের। প্রকৃতি পুজোর পাশাপাশি মাটির খোলায় ফুটন্ত ঘিয়ে হাত ডুবিয়ে গুড়পিঠে তৈরি করেন গ্রামের ব্রতী যুবকেরা। সেইসঙ্গে চলে ধামসা মাদলের তালে তালে আদিবাসী মহিলাদের নাচগান। উৎসব উপলক্ষে মেলাও বসে ইদানিং।যা পালন হয়ে আসছে আজও।সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাকুড়ডিহা গ্রামের এই উৎসবের কথা ছড়িয়ে পড়েছে দূরদূরান্তে।প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ উৎসব দেখতে হাজির হন এই গ্রামে।