নিজস্ব সংবাদদাতা : স্বাধীনতা সংগ্রামের পীঠস্থান ছিল অবিভক্ত মেদিনীপুর। সেখানকার কালীপুজোর সঙ্গেও জড়িয়ে গিয়েছে বিপ্লবীদের নাম। রয়েছে নানান কাহিনি। কর্ণেলগোলা, লাল দিঘির মতো পুজোগুলির সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা ইতিহাস। কার নাম জড়িয়ে নেই সেখানে! ক্ষুদিরাম, সত্যেন বোস, বিমল দাশগুপ্ত আরও কতজন! বর্তমানে সেই পুজোগুলি ঐতিহ্য মেনে চালিয়ে নিয়ে যাওয়াই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। পুজোর ইতিহাস কিন্তু আপনাকে অবাক করবে। এর অদূরেই ব্রাহ্ম সমাজ মন্দির। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এই কালী মন্দিরেই দীক্ষা নিয়েছিলেন ক্ষুদিরাম বসু।মেদিনীপুর শহরের হবিবপুরের লছি পোদ্দার বাড়ির কালী পুজো জেলার অন্যতম প্রাচীন পুজো হিসাবেই পরিচিত। প্রায় চারশো বছরের পুরনো এই পুজো জেলাবাসীর মনে প্রাণে জায়গা করে নিয়েছে। কথিত আছে, পুজোর প্রতিষ্ঠাতা লক্ষ্মী নারায়ণ দে একদিন দেবীর স্বপ্নাদেশ পান। দিন কয়েক পরেই মধ্যরাতে লক্ষ্মী নারায়ণ দে'র কানে ভেসে আসে নূপুর পরিহিতা মহিলার বাড়ির মধ্যে বিচরণের শব্দ। স্বপ্নাদেশে বলা হয়, নূপুরের শব্দ যেখানে গিয়ে বন্ধ হবে, সেখানেই মায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেই আদেশ অনুয়ায়ী সূচনা হয় এই বাড়ির কালী পূজার। তবে, লছি পোদ্দার নাম হয় লক্ষ্মী নারায়ণ দে'র নামের অংশ থেকেই। শোনা যায় লক্ষ্মী থেকে লছমি হয়ে লছি (বা, লচি)। যেহেতু তিনি পোদ্দারি করতেন, তার থেকে পুজোর নাম হয় লছি পোদ্দার (বা, লচি পোদ্দার) বাড়ির পুজো। একটি অবিবাহিতা মেয়ের সারা বছরের ভোজনের পরিমাণ স্বরূপ ১০৮ কেজি চাল উৎসর্গ করা হয় দেবীর উদ্দেশ্য। মেদিনীপুর শহরের হবিবপুরে অবস্থিত সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরে দেবীর বিগ্রহ প্রতিষ্ঠার পেছনেও ইতিহাস রয়েছে। কালীমন্দির সূত্রে জানা গিয়েছে, রঘুনন্দন দীর্ঘাঙ্গি নামে এক বৈষ্ণব সাধু স্বপ্নাদেশ পেয়ে পুকুর থেকে অষ্টধাতুর বামকালীর বিগ্রহ তুলে নিয়ে এসে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তখন হবিবপুর ছিল জঙ্গলে ভর্তি। এই এলাকায় শ্মশান ছিল। তিনি বৈষ্ণব হওয়ায় মায়ের বিগ্রহ পুজোর জন্য কালিকারঞ্জন মহারাজ নামে একজনকে পুরোহিত হিসাবে নিযুক্ত করেছিলেন। শবের উপর মায়ের বিগ্রহের পুজো হত। আনুমানিক ৫৩৮ বছর আগে এই বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল বলে দাবি বর্তমান সেবাইতদের। পুরানো ঐতিহ্য মেনেই পুজো হয়ে আসছে আজও। অন্যদিকে, মীরবাজার কাঁথকালী বিগ্রহ চারশো-সাড়ে চারশো বছরের পুরানো। কথিত আছে,ডায়মন্ডহারবারের বাসিন্দা নন্দগোপাল মুখোপাধ্যায় স্বপ্নাদেশ এই বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
যদিও প্রথমে তিনি এসে বিগ্রহ খুঁজে পাননি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তিনি বটগাছের পাশে দেওয়াল ভেঙে স্বস্তিকচিহ্ন দেখেন। পরে, মায়ের বিগ্রহের হদিশ পান। সেই সময় তিনি টিনেরচালের মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পুরানো রীতি মেনেই আজও মন্দিরে পুজো করা হয়। বটতলাচকের দক্ষিণাকালী মন্দিরের সুন্দর ইতিহাস রয়েছে। কথিত আছে, এক তান্ত্রিক সাধু নীলাচলে যাওয়ার পথে গাছগাছালিতে ভরা বটতলা চকে আশ্রয় নেন। তিনি টিনের চালা দেওয়া ঘরে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরবর্তীকালে, বর্তমান মন্দির তৈরি হয়। প্রতি মঙ্গল ও শনিবার দূর-দূরান্ত থেকে বহু ভক্ত মনোস্কামনা পূরণের জন্য এই মন্দিরে পুজো দিতে আসেন।এখনও পুরনো ঐতিহ্য মেনে কালীপুজোর সময় ছাগবলি হয়। পুজোর পরদিন অন্নকূট উৎসব হয়।