ঢাকা, জাকির হোসেন: শনিবার বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে কোটা মামলার শুনানি হওয়ার কথা। কিন্তু শুক্রবার ছুটির দিন সত্ত্বেও চলে দফায় দফায় সংঘর্ষ। ঝরেছে রক্ত। শনিবার ঢাকা মেট্রো স্টেশনেও আন্দোলনকারীদের আগুন লাগিয়ে দেওয়ার খবর সামনে এসেছে। শুক্রবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (সংবাদমাধ্যম) ফারুক হোসেন ঘোষণা করেন যে, শুক্রবার দুপুর থেকেই পরবর্তী নির্দেশ ঘোষণা না-হওয়া পর্যন্ত রাজধানীতে সব ধরনের সভা-সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল। এই উত্তেজনাকর অবস্থার মধে্যই শুক্রবারও আরও অন্তত ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে বেসরকারি সূত্রে খবর। সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দঁাড়াল ১০৫-এ।শুক্রবারও বাংলাদেশ জুড়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠন। এই আবহে আন্দোলনকারীরা শুক্রবার বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। ঢাকার উত্তরা, মহম্মদপুর, বাড্ডা-সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বেধেছে আন্দোলনকারী ছাত্রদের। শুক্রবার সকাল থেকেই ঢাকার রাস্তায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সদস্যদের দেখা যায়। কিন্তু আওয়ামি লিগের বহু নেতা-কর্মীও লাঠি নিয়ে রাস্তায় নেমেছে আন্দোলন দমন করতে। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে এদিন সকাল থেকে হেলিকপ্টারে টহল দেওয়া হয়। এখনও পর্যন্ত যা খবর মিলেছে, তাতে ২৫০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
এর মধ্যেই নরসিংডি জেলার একটি জেলে আগুন লাগিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। সে দেশের সংবাদ মাধ্যমগুলির দাবি, ওই আগুন লাগানোর ফলে জেল থেকে শতাধিক কয়েদি পালিয়ে গিয়েছে। এক জেল আধিকারিক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বিক্ষোভকারীরা জেলে হামলা করার পরে শতাধিক কয়েদি পালিয়েছে। এক প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি, তিনি নিজেই অন্তত কুড়ি জন কয়েদিকে পালাতে দেখেছেন। এদিকে যে সমস্ত ভারতীয় পড়ুয়া বাংলাদেশ ছিলেন তাঁরা দেশে ফিরছেন। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের চুয়াডাঙ্গা দর্শন চেক পোস্ট হয়ে তাঁরা ফিরছেন বলে খবর। জানা গিয়েছে, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ৭০জন পড়ুয়া ভারতে ফিরেছেন। এর পাশাপাশি পড়শি দেশ নেপালেও ফিরে যাচ্ছেন পড়ুয়ারা।
এই পরিস্থিতিতে দলে দলে ভারতীয় পড়ুয়ারা বাংলাদেশ ছাড়ছেন। যে যেভাবে পারছেন বাংলাদেশ থেকে বেরনোর চেষ্টা করছেন। সূত্রের খবর, শুধুমাত্র শুক্রবার সীমান্ত পার করেছেন ৩০০ জন ভারতীয় পড়ুয়া।
জানা যাচ্ছে, ত্রিপুরার আগরতলার কাছে আখুড়া ও মেঘালয়ের ডাউকি দিয়ে ভারতে ফিরছেন পড়ুয়ারা। তাঁদের মধ্যে কেউ উত্তর প্রদেশের বাসিন্দা, কেউ হরিয়ানা অথবা কাশ্মীরের। এই পড়ুয়াদের মধ্যে অনেকেই বাংলাদেশে এমবিবিএস পড়ছিলেন বলে জানা গিয়েছে।
কেন সংরক্ষণ ইস্যুতে উত্তাল বাংলাদেশ? বাংলাদেশের সংরক্ষণের নিয়ম নিয়েই এই অশান্তির সূত্রপাত। ২০১৮ সালেও একই বিষয়ে আন্দোলন উত্তাল হয়ে উঠেছিল দেশটি। প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিতে সে দেশে মোট ৫৬ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল, যার মধ্যে ৪৪ শতাংশ আসন সাধারণের জন্য নির্ধারিত ছিল। ৫৬ শতাংশ আসনের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০%, জেলার জন্য ১০%, জনজাতিদের জন্য ৫ শতাংশ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ ছিল। ২০১৮ সালে সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনা সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের ৩০ শতাংশ, নারীদের ১০ শতাংশ ও জেলার ১০ শতাংশ আসন বাতিল করে দেন। রাখা হয় শুধু জনজাতিদের ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ সংরক্ষণ। এ নিয়ে মামলা গড়ায় বাংলাদেশের হাইকোর্টে। চলতি বছরের ৫ জুন হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, হাসিনা সরকারের নির্দেশ অবৈধ। ফের প্রতিবাদ আন্দোলনে নামেন পড়ুয়ারা।
এদিকে শুক্রবার দুপুরে কলকাতার নন্দন এবং অ্যাকাডেমি চত্বরে কয়েকশ বিক্ষোভকারী বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারের দমনপীড়নের প্রতিবাদে মিছিল করেন। এখান থেকে সামান্য দূরেই অবস্থিত বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশন।