Skip to content

কৌশিকী অমাবস্যায় এক বিশেষ মুহূর্তে তারাপীঠে!

নিজস্ব সংবাদদাতা :  মা তারারই আরেক নাম কৌশিকী। দশমহাবিদ্যার অন্যতমা দেবী তারা মর্ত্যে আবির্ভূতা হন আজই। পুরাণমতে, এই দেবী কৌশিকীই শুম্ভ-নিশুম্ভকে বধ করেছিলেন। সেই থেকেই পালিত হয়ে আসছে কৌশিকী অমাবস্যা।

দিনটিতে বীরভূমের তারাপীঠে মা তারার পুজো ও উৎসব হয়। ভক্তেরা ছোটেন তারাপীঠে। দেবতাদের আকুল আহ্বানে সাড়া দিয়ে তিনি পার্বতীর দেহকোষ থেকে আবির্ভূতা হয়েছিলেন রাক্ষস ভ্রাতৃদ্বয় শুম্ভ ও নিশুম্ভকে বধ করার উদ্দেশ্যে। তাঁর অলোকসামান্য সৌন্দর্য অসুরদের আকৃষ্ট করেছিল, শুম্ভ তাঁর সৌন্দর্যের বর্ণনা শুনে প্রলুব্ধ হয়ে তাঁকে নর্মসহচরী করার মানসে একাধিক দৈত্যকে দূত হিসাবে নিয়োগ করেন, এবং ক্রমে সপার্ষদ ধ্বংস হন।

তারাপীঠ মন্দির কমিটির তারামায়ের সেবাইত প্রবোধ কুমার বন্দ্যোপাধ্যা বলেন, "তন্ত্র ও শাস্ত্র মতে ভাদ্র মাসের কৌশিকী অমাবস্যার অনেক মাহাত্ম্য রয়েছে ৷

এই দিনে তারাপীঠে মা তারার বিশেষ পুজোর করা হয়ে থাকে ৷ সকালের মঙ্গল আরতি দিয়েই শুরু হয়ে যায় পুজো ৷ মায়ের শিলামূর্তিকে স্নান করানোর পর রাজবেশে সাজানো হয় ৷ সন্ধ্যাবেলা আয়োজন থাকে মায়ের বিশেষ আরতির ৷"যে আরতি দেখতে বহু ভক্ত সমাগম হয় মন্দির চত্বরে ৷ বেজে ওঠে ঘণ্টা ৷ ধূপ-ধুনো দিয়ে শুরু হয়ে মঙ্গল মায়ের আরতি ৷

ফুলের সাজে মায়ের অপরূপ রূপ দেখতে ভিড় হয় গর্ভগৃহে ৷ চলে পঞ্চপ্রদীপ নিয়ে আরতি ৷ কৌশিকী আমাবস্যায় মা তারার সন্ধ্যা আরতিতেও বিশেষ আয়োজন থাকে ৷ প্রায় ২০ মিনিট ধরে চলে আরতি ৷অন্যদিকে, এদিন দুপুরে মাকে ভোগ দেওয়া হয়েছে নিয়ম-রীতি মেনে ৷

ভোগের থালায় সাজানো ছিল সাত রকমের ভাজা, মাছের মাথা, সাদা চালের ভাত, পোলাও, রকমারি মিষ্টি ও রকমারি ফল ৷ এই দিন মাকে, আতপ চাল, নারকেল, ১০৮টি জবা ফুল, ঘিয়ের প্রদীপ ও ঘি নিবেদন করা হয় । কথিত আছে, কৌশিকী আমাবস্যায় সাধনা করে সিদ্ধিলাভের পর মা তারার দর্শন পান সাধক বামদেব ।

তিনি তারাপীঠ শ্মশানের শ্বেত শিমূলতলায় সাধনা করেছিলেন । সেই থেকেই তারাপীঠে মহা ধুমধামে পালিত হয় কৌশিকী আমাবস্যা ।দৈত্যপীড়িত দেবতারা কৈলাসে শিবের কাছে এসে তাঁদের উপর অসুরদের অত্যাচারের বিহিত চান। শিব তখন দেবতাদের সামনেই পার্বতীকে ডেকে বলেন, 'কালিকা, তুমি ওঁদের উদ্ধার করো।'

সব দেবতার সামনে তাঁকে 'কালী' বলে ডাকায় পার্বতী ক্ষুব্ধ ও অপমানিত বোধ করেন, রেগেও যান। তখন তিনি তাঁর গাত্রবর্ণ পরিবর্তনের লক্ষ্যে মানস সরোবরের ধারে কঠিন তপস্যায় বসেন। তপস্যাশেষে মানস সরোবরের জলে স্নান করেন পার্বতী। স্নানের পরে ত্বকের সব কালো-কোষ পরিত্যাগ করে পূর্ণিমাচাঁদের মতো গাত্রবর্ণ ধারণ করেন। তাঁর পরিত্যাগ করা কালো ওই কোষগুলি থেকে অপূর্ব সুন্দরী কৃষ্ণবর্ণা এক দেবীর সৃষ্টি হয়। সেই দেবীই কৌশিকী।

শ্রীশ্রী বামাক্ষ্যাপা ঠাকুরের প্রকৃত স্বরূপ জানা সাধারন মানুষের পক্ষে দুরূহ। বামদেব বাবা স্বয়ং শিব বা সাক্ষাৎ মহারুদ্র সদাশিব, তারাপীঠ ভৈরব।ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে চিনেছিলেন একমাত্র ভীষ্মদেব। পরম পুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবকে চিনেছিলেন একমাত্র স্বামী বিবেকানন্দ। তেমনি শ্রীশ্রী বামাক্ষ্যাপা ঠাকুরকে চিনেছিলেন শ্রীশ্রী মোক্ষদানন্দ ও শ্রীশ্রী কৈলাসপতি। একবার তারাপীঠের শিলাময়ী তারা মা নাটোরের রানী অন্নদা সুন্দরীকে স্বপ্নে চিনিয়ে দিলেন বামদেব বাবা আসলে কে। নাটোরের রানী আতঙ্ক জনক দু:স্বপ্ন দেখেছেন। মা তারা রানীর শয্যার পাশে দণ্ডায়মান।

অন্নদা, আমি মন্দির ত্যাগ করে চলে যাচ্ছি ।রানীমা তারা মায়ের পা জড়িয়ে ধরে বলে, চলে যাচ্ছ কেন মা ? কোন অপরাধে এই সাজা দিচ্ছ মা। অপরাধ তোদের নয়। অপরাধ তোর মন্দিরের পাষন্ড পুরোহিত আর পান্ডাদের। ওরা কি করছে বলো মা। আমি এক্ষুণি এর ব্যবস্থা নিচ্ছি। ওরা আমার ভৈরব বামাক্ষ্যাপাকে প্রচুর প্রহার করেছে।সেই প্রহারে চিন্হ দেখ আমার প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গে। আমি ক্ষত বিক্ষত রক্তাক্ত। এখানেই শেষ নয়। চারদিন তাঁকে প্রসাদ খেতে দেয়নি। তাই আমিও অভুক্ত।

রানীমা কাতর কণ্ঠে বলেন, মা তুমি যুগ যুগ ধরে এই মহাপীঠে বিরাজ করছো। এই ত্রিতাপ জ্বালায় জর্জরিত মানুষ তোমার করুণা ধারায় অভিষিক্ত হচ্ছে। দয়া কর মা, কৃপা কর এই মহাপীঠ ছেড়ে কোথাও যেও না। আমাকে এর উপায় বলে দাও মা।তারা মা রানীকে বললেন, আমার কথা মন দিয়ে শোন, আজ থেকে আমার পূজা ভোগের আগে বামাক্ষ্যাপার পূজা ও ভোগ আগে হবে। তারা মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে পরের দিন প্রভাতে হাজির হলেন তারাপীঠ মন্দিরে। মন্দিরে সকলকে ডেকে নায়েব মশাই শুনিয়ে দিলেন রানীমার হুকুম। মাকে নিবেদিত ভোগ উচ্ছিষ্ট করার অপরাধে মন্দিরের পুরোহিত বামাক্ষ্যাপা ঠাকুরকে চরম প্রহার করেছেন সেই প্রহারের প্রতিটি চিন্হ যে মা তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গে বহন করে চারদিন উপবাসী থেকে তারাপীঠ ছেড়ে যেতে চান সেই মায়ের সঙ্গে বামাক্ষ্যাপা ঠাকুরের যে কি সম্পর্ক তা বুঝতে বিলম্ব হল না অন্নদা সুন্দরীর।

Latest