নিজস্ব সংবাদাতা : সম্প্রতি, অ্যামাজনের জঙ্গলের মাংসাশী বা পতঙ্গভুক উদ্ভিদ বাঁকুড়ার সোনামুখীর জঙ্গলে ড্রসেরার খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল। সেই আবহেই বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী তথা অধ্যাপক (প্রফেসর) অমল কুমার মণ্ডল, গবেষক সুখদেব বেরা এবং সহকারী গবেষক ড. অয়ন কুমার নস্করের এই গবেষণা নিঃসন্দেহে এই সংক্রান্ত বহু প্রশ্নের উত্তর দেবে বা উদ্ভিদ- বিজ্ঞানের জগতকে আরও সমৃদ্ধ করবে। অধ্যাপক অমল কুমার মণ্ডল জানান, "আমাদের পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের বেশ কিছু অঞ্চলে এই মাংসাশী উদ্ভিদের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে দু'টি প্রজাতির সূর্যশিশির ও সাতটি প্রজাতির পাতাঝাঁজি এবং পূর্ব মেদিনীপুরে তিনটি প্রজাতির পাতাঝাঁজি বিভিন্ন ঘাস জমি ও জলাশয়ে পাওয়া গিয়েছে। সুর্যশিশির উদ্ভিদটিকে ইংরেজিতে 'সানডিউ' বলে। পশ্চিম মেদিনীপুরে পাওয়া 'সুর্যশিশির' উদ্ভিদ দুটির বিজ্ঞানসম্মত নাম হল 'ড্রোসেরা ইন্ডিকা' ও 'ড্রোসেরা বার্মানি'।তিনি এও বলেন, "সূর্যশিশির উদ্ভিদটি মূলত ভেজা বা শুষ্ক ঘাসজমি, শালবনের ভেতরে অথবা পাথুরে ভূমিতে জন্মায়। এদের পাতাতে অসংখ্য ট্রাইকোম থাকে এবং ওই ট্রাইকোমের অগ্রভাগে এক ধরনের আঠালো পদার্থ থাকে। উদ্ভিদগুলি সবুজ বা লাল বর্ণের হওয়ায়, ছোট ছোট পতঙ্গরা উদ্ভিদটি দ্বারা আকর্ষিত হয়ে পাতাতে বসে এবং পাতাতে উপস্থিত আঠালো পদার্থে আটকে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে পাতার ট্রাইকোমগুলি পতঙ্গটিকে জড়িয়ে ধরে এবং পুষ্টিরস শোষণ করে। আশ্চর্যজনক বিষয় হল, এই মাংসাশী উদ্ভিদগুলি সালোকসংশ্লেষণ করতে পারে। কিন্তু এরা যে ধরনের পরিবেশে জন্মায় সেখান থেকে পর্যাপ্ত পরিমানে নাইট্রোজেন শোষণ করতে পারে না। যে জায়গায় এরা জন্মায়, সেই মাটিতে নাইট্রোজেনের ঘাটতি আছে। ঘাটতি পূরনের জন্যই এই বিশেষ ধরনের উদ্ভিদগুলি বিশেষ ধরনের অভিযোজন করে পোকামাকড় ধরে খেয়ে নিজেদের দৈনন্দিন জীবনে নাইট্রোজেনের ঘাটতি পূরণ করে। নাইট্রোজেন সজীব কোষের জৈবিকক্রিয়া চালানোর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর অভাব পূরণের জন্যে মাংসাশী উদ্ভিদগুলি প্রাণী শিকার করে মূলতঃ প্রোটিন অংশ শোষণ করে। প্রোটিন হল নাইট্রোজেন ঘটিত জৈব অণু যা মাংসাশী উদ্ভিদের নাইট্রোজেনের চাহিদা পূরণ করে।